বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
এস, এম, মনির হোসেন জীবন
রাজধানীর বৃহত্তর উত্তরা এলাকায় বর্তমানে চাঁদাবাজদের বিশাল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন হাত বদলে চাঁদাবাজরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারা দৈনিক ও মাসিক
ভিত্তিতে অবৈধ পথে কামিয়ে নিচেছন লাখ লাখ টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য সূত্রের।
সূত্র জানিয়েছে, এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা রাস্তাাঘাট দখল- বেদখল থেকে শুরু করে অবৈধ ফুটপাত, সরকারি পরিত্যক্ত খাসজমি, অবৈধ কাঁচা বাজার, দোকানপাট, ফার্নিচার মার্কেট, অটোরিকসা (সিএনজি), বিআরটিএ অফিস ও পাসপোর্ট অফিসকে পূজি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। ঢাকা-১৮ আসনের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এবং একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ গ্রুপ। আর এই সব দখলে রয়েছে বিগত সরকারের স্হানীয় দলীয় নেতাকর্মী। দলীয় নাম ও পদের নাম ভাঙ্গিয়েব মোটা অংকের টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তাদের সাথে জড়িত রয়েছে একটি প্রভাবশালী কুচক্রী মহল। সেই সাথে বিরোধী দলের কতিপয় নেতা এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা শীর্ষ নেতাদের সাথে গোপনে আতাত করে অবৈধ ভাবে প্রতি মাসে কৌশলে কামিয়ে নিচেছ লক্ষ লক্ষ টাকা। খবর একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সুত্রের।
আজ সোমবার সরজমিন পরিদর্শন, স্থানীয় লোকজন,
ফুটপাত ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, বৃহত্তর উত্তরা এলাকার ফুটপাত চাঁদাবাজদের বিশাল একটি ঘাটী রয়েছে।
ইতিপূর্বে উত্তরার চাঁদাবাজীকে কেন্দ্র করে নেতা কর্মীদের মধ্যে গুলিবিনিময়, খুন, হামলা, মামলা এবং পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবু ও চাঁদাবাজী, দখল বাজী, দোকানপাট, কাঁচাবাজার দখল, বেদখল পাল্লা দিয়ে চলছে। সেই সাথে ফুটপাতের বিট বিক্রি, ভাড়া, অগ্রিম জামানত ও দখলধারীত্ব থেমে নেই। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা দলের নেতাদের হাতে পুরোপুরি ভাবে জিম্বি হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরার অভিজাত এলাকা
হাউজ বিল্ডিং মাসকট পাজা ও নর্থ টাউয়ারের
সামনে সামনে দলের কতিপয় নেতার নেতৃত্বে
গড়ে তুলা হয়েছে একটি মিনি ফুটপাত মার্কেট।
এদের অনেকের নামে মামলা চলমান আছে। আবার কেউবা জেল খেটে কিছু দিন আগে বের হয়েছেন। এখানে গড়ে তুলা হয়েছে প্রায় শতাধিক অবৈধ জামা কাপড়ের দোপানপাট। ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের লোকদের ধারা নেই। কেই যদি প্রদিবাদ করতে আসে তখন তাকে বিভিন্ন ভাবে নামধানী চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা নাজেহাল করে। অনেক সময় মারধর সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে অহেতুক হয়রানী করার ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনতার ক্রাইম এর সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে একটি সংবাদ
প্রকাশিত করার ঘটনায় ভূমি দস্যু ও চাঁদাবাজরা তাকে মারধর ও নাজেহাল করেছে। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
একটি সুত্রে জানা গেছে, এসব অবৈধ ফুটপাত
ব্যবসায়ীরা বিগত ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে। আর নেতারা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ উপায়ে কামিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। অনেকে চাঁদাবাজীর টাকা দিয়ে গাড়ী ও বাড়ি করেছেন। প্রতিদিন ফুটপাত, কাঁচাবাজার,
চা –পান, ভাঙ্গারী দোকান থেকে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক
টাকা চাঁদা তুলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচছুক একাধিক ফুটপাত ব্যবসায়ী
আজ সোমবার জানান, স্হানীয় প্রশাসনকে নিয়মিত হারে টাকা দিতে হয়। এক কথায় বলতে হয়, টাকা ছাড়া ফুটপাতে ব্যবসা করা যায় না। এক চাঁদা বাজকে বলতে শোনা যায়, জ্বলতি টাকা দে, নইলে দোকান পাট সরিয়ে নে। তা না হলে দলীয় লোক দিয়ে তোমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিবো বলেও হুমকী প্রদান করে।
উত্তরার ফুটপাত ব্যবসায়ী উজ্জল, জসিম আলম, সেলিম জানান, আমরা সব কিছু ম্যানেজ করে টাকা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করি। কেউ যদি প্রদিবাদ করতে আসে তখন তাকে বিভিন্ন ভাবে চাঁদাবাজরা সন্ত্রাসী ভাড়া করে মারধর, প্রাননাশের হুমকী, ভয়ভীতি প্রদর্শন এমনকি নানী ভাবে নাজেহাল করে। অনেক সময় মারধর সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে অহেতুক হয়রানী করার ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একটি সুত্রে জানা গেছে, এসব অবৈধ ফুটপাত
ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মোটা অংকের
টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে। অনেকে চাঁদাবাজীর টাকা দিয়ে দামি গাড়ী ও বাড়ি করেছেন। প্রতিদিন ফুটপাত, কাঁচাবাজার, চা –পান, ভাঙ্গারী দোকান থেকে প্রায় লক্ষাধিক lটাকা চাঁদা তুলা হয়।
ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বলেন, দৈনিক ১/২/ শ টাকা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করি। উপরের নির্দেশে পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালায় এবং ব্যবসায়ীদেরকে থানার গাড়িতে করে মালামাল সহ ধরে নিয়ে যায়। আমরা অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ি। প্রতি সিএনজি থেকে ১০০/১৫০ টাকা হারে প্রতিদিন (জিপি) নামে চাঁদা তুলে থাকে। বৃহত্তর উত্তরা ৪ থানা এলাকায় কমপক্ষে ২/৩ হাজার অটোরিকসা ও সি এনজি রয়েছে। এসব যানবাহন থেকে প্রতিনিয়তই চাঁদা তুলা হয়। এসব এলাকায় পরিবহন সেক্টর ও ফুটপাত চাঁদাবাজদের শক্তিশালী একটি ঘাঁটী রয়েছে।
এ ব্যাপারে উত্তরা বিভাগের পুলিশের এক উর্ধ্বতন
কর্মকতার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে চাঁদা তুলার কথাটি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, পুলিশের কোন সদস্য চাঁদাবাজীর সাথে জড়িত নয় বলে তিনি দাবী করেন।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির একাধিক নেতা আজ সোমবার বলেন, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চাঁদাবাজি করে এবং যারা চাঁদাবাজি, দখলবাজী ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সঠিক তথ্য প্রমান ও সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, যে অপরাধ করবে তার দায় ও শাস্তি তাকেই বহন করতে হবে। দল তার দায় কখনও নিবে না।
এবিষয়ে জানতে উত্তরা বিভাগের পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কোথাও চাঁদাবীজী ও দখলবাজীর অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।